গুটি খাঁর গুটিবাজি
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ০১ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৫
তার নাম। গ্রামে গুটি চালেন তিনি। একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়া তার কাজ। তিনি ‘হাছা’কে মিছা করেন। আবার মিছাকে ‘হাছা’ করেন। গ্রামের লোকেরা তাকে টাউট, বাটপাড় ও ধুরন্ধর ব্যক্তি হিসেবেই জানে। মামলাবাজ হিসেবেও তার ‘খ্যাতি’। লোকজন তাকে সামনাসামনি ভয় করে, সালাম ঠোকে, কিন্তু চোখের আড়াল হলেই গালমন্দ করে। এটা কোনো গল্পের প্লট নয়। আমাদের গ্রামে সত্যি সত্যি এ রকম একজন মেম্বার ছিলেন। তার দু’রকম আচরণের একটা গল্প বলি। তখন ১৯৭৮ সাল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে। গ্রামেই ছিলাম তখন। নির্বাচনের দিন ধানের শীষের পক্ষে মূল ভূমিকা পালন করছিলাম। মেম্বার হিসেবে ‘গুটি খাঁ’ সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। আবার বিপরীত পক্ষের লোক বলে তাকে কেউ লোক মনে করছিল না।
নির্বাচন কেন্দ্রে আমার অবাধ যাতায়াত তার পছন্দ হচ্ছিল না। কেন্দ্রের পুলিশ প্রধান তাকে কাছে পেয়ে আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করল। তিনি আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো খাতার লোক বানিয়ে দিলেন। আমার কাছে অস্ত্রও থাকতে পারে- এমন আভাস দিলেন। আধা পুলিশ কর্মকর্তাটি আমাকে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিতে চাইলেন। আমি জোরেশোরে তাকে ধমক দিলাম। তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন বেরিয়ে এসে মানুষের মধ্যে আসলাম, তখন গুটি খাঁ আমাকে সমীহ করে সালাম দিলেন। পুলিশকে ধমক দেয়ার জন্য সাবাসি দিলেন। আমার বাবারও প্রশংসা করলেন। ভাবখানা এই যে, বাপের বেটা সাদ্দাম!
ঘটনাটি খুবই ছোট। এ ঘটনায় একজন ব্যক্তির কূট চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে। শুদ্ধ করে এটাকেই আমরা বলি ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বা দ্বৈত ভূমিকা। একেই বলে ‘ভিলেজ পলিটিকস’। গ্রামীণ রাজনীতি এর বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে। কিন্তু ভিলেজ পলিটিকস বলতে আমরা যা বুঝি, তা এর চেয়েও বেশি কিছু। সাধারণভাবে গ্রামীণ জীবন সহজসরল ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। এরই মধ্যে কিছু লোক থাকে যারা তাদের নীচতা, হীনতা ও হিংস্রতায় গ্রামের সাধারণ জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এরা যখন যে সরকার আসে, তার পক্ষেই কাজ করে। এ জন্য গ্রামের লোকেরা এদের ‘পিজিপি-প্রেজেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি’র লোক বলে উপহাস করে থাকে। এরা পেশাদার কূটবুদ্ধির লোক; ষড়যন্ত্রপ্রিয়। সারাক্ষণ মামলা মোকদ্দমা ও বিচার সালিশ নিয়েই ব্যস্ত থাকে এরা। তিলকে তাল করে। তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে এরা লড়াই-যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। সংবাদপত্রে মাঝেমধ্যে দু’গ্রামের সংঘর্ষের খবর দেখা যায়। অনুসন্ধানে এ ধরনের ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিলেজ পলিটিকসের প্রমাণ মিলে। ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ঘটনার ব্যাখ্যা নিজ সুবিধামতো করে। মামলার পেছনে ইন্ধন জোগায়। মামলায় মামলায় নিঃস্ব হয়ে যায় অনেক পরিবার। বংশানুক্রমে মামলার উদাহরণ আমাদের গ্রামেও রয়েছে। সব জায়গাতেই মামলাবাজ কিছু লোক থাকে।
আমাদের গ্রামে এমনি এক লোক ছিলেন। তাকে নিয়ে একবার ফিচার করেছিলাম। লিখেছিলাম, ‘মামলা তার নেশা, মামলা তার পেশা, মামলা তার সেবা।’ ছোট বেলায় তাকে দেখেছি মামলার কাগজপত্রের বোঁচকা নিয়ে চলতে। মাসের ৩০ দিনের ২০ দিনই কাটাতেন সদরে- মামলার তদবিরে। অতীতে এক ধনবান ও বলশালী ব্যক্তিকে মামলায় নাস্তানাবুদ করে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে অতি সামান্য বিষয়েও তিনি মামলা করতেন। জমিজমার মামলা হরহামেশা লেগেই থাকত। খেজুরগাছের পাকা খেজুর অন্য কেউ কেটে নিয়ে গেছে অথবা কেউ মুরগির ঠ্যাঙ ভেঙে দিয়েছে কিংবা কেউ কারো হাঁস হজম করেছে- দাও ঠুকে মামলা। আসলে মামলা একটি মানসিকতার নাম। বাংলাদেশে বরিশালীদের মামলাবাজ হিসেবে পরিচিতি আছে। সেখানে প্রচলিত প্রবাদটি এ রকম, ‘হাতে কাজ নেই, তাই চাচার নামে মামলা দিয়ে আসলাম।’
মামলায় জেতার জন্য হেন অপকর্ম নেই যা ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা না করেন। নিজের ছেলেকে খুন করে শত্রুর নামে মামলা দেয়ার মতো নিষ্ঠুর নজিরও গ্রামবাংলায় রয়েছে। স্বজনকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য গুম-কেস বিরল নয়। এসবই ভিলেজ পলিটিকসের উদাহরণ। ভিলেজ পলিটিকসের বিষয়টি যে আর ভিলেজে সীমাবদ্ধ নয়- এ উপলব্ধি থেকে কিছু লেখার ইচ্ছা অনেক দিনের। ভেবেছিলাম, ক্ষেত্রে আমিই একা। কিন্তু ইন্টারনেটে গিয়ে দেখলাম, অনেকের সুনজরেই বিষয়টি এসেছে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে ভিলেজ পলিটিকসের সমপর্যায়ে বিবেচনা করার লোকের সংখ্যা অনেক। ‘গ্রেট ম্যান থিংক অ্যালাইক!’
অতীতে হয়তো এত ব্যাপকভাবে জাতীয় রাজনীতিতে ভিলেজ পলিটিকসের প্রকোপ ছিল না। বিগত এক দশক ধরে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি, বিষয়-বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে ভিলেজ পলিটিকসের বহু উদাহরণ পাওয়া যাবে। ক. ১/১১ এর সরকার মাইনাস-টু ফর্মুলা এবং একই ভাষায় দু’নেত্রীকে তাদের দায় মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ছিল। একই সাথে, তারা একজনকে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে সফল হয়েছে। খ. ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে অনেকটা অভাবিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রভাবিত ফোনালাপ যখন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তখন এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বোঝা যায়।
গ. ওই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় অফার করেন, তখন ‘ধন্য ধন্য’ পড়ে যায়। অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গাছের গোড়াটি কেটে নেয়া হলো। ঘ. ওই নির্বাচন প্রতিহতকরণের আন্দোলন যখন নির্বাচনের পরে তুঙ্গে ওঠে, তখন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় যে, এটি নিছক নিয়মরক্ষার বা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন, তখন বিরোধী দল তা বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়। ঙ. ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় বিরোধী দলের সূচিত আন্দোলনকে সহিংস ও সন্ত্রাসী তথা ‘জঙ্গি’ আন্দোলনরূপে প্রমাণ করার সরকারি প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। চ. বিরোধী পক্ষের নেতাদের নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য ভিলেজ পলিটিকস স্টাইলে ব্যাপকভাবে গুম করা শুরু হলো।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী যখন নিখোঁজ হন, তখন শীর্ষ নেতৃত্ব একে ‘সাজানো ও উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিহিত করেন। ছ. মানুষ খুনের বিষয়টি গ্রামে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার মনে করা হতো। তবে ভিলেজ পলিটিকসের প্রয়োজনে দুর্বৃত্তরা খুন-খারাবি থেকে বিরত হতো না। গত এক দশক ধরে গ্রামে কী শহরে, মানুষ খুনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক হয়ে গেছে। শাসকদের নিজস্ব এজেন্ডা পূরণ করার জন্য ফাঁসি, বন্দুকযুদ্ধ ও নানা ধরনের আইনি-বেআইনি আবরণে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গি দমন, মাদক উৎখাত ও সন্ত্রাস নির্মূলের নামে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীকেও নিধন করা হয়েছে।
ভিলেজ পলিটিকসে মামলার বিষয়টি এতই ব্যাপক ও বিধ্বংসী যে, একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য মামলার পর মামলা ঠুকতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলার সংখ্যা শতককে অতিক্রম করে যায়। আর আসামির সংখ্যা যত বেশি দেয়া যায় মামলায় ততই লাভ। এটা থেকে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন কেউ বাদ যায় না। সংবাদপত্রে এ রকম অসংখ্য প্রতিবেদন বেরিয়েছে, যেখানে অবুঝ শিশুও আসামি। আমাদের গ্রামে একটি জমি দখলের মামলায় আসামি করা হয়েছিল ৩৫৩ জনকে। তখন মনে হয়েছিল, সেটিই বোধহয় দেশের সবচেয়ে বড় মামলা। কিন্তু বর্তমান সরকারের কল্যাণে সে সংখ্যাটি সামান্যই মনে হয়। মামলার ব্যাপারে বর্তমান সরকার ‘বিশ^ চ্যাম্পিয়ন’ হয়তোবা। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ৫০ হাজার ৭৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জনকে করা হয়েছে আসামি। এ ছাড়া, প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী জেলে।
অন্যান্য বিরোধী দলের হিসাব পাওয়া যায়নি। গত জানুয়ারির পরে বিশেষত, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন ব্যাপক ধরপাকড় এবং মামলা দায়ের চলছে। দুষ্ট লোকেরা সাধারণত মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকে এবং তার কোনো-না-কোনো হেতু তারা উল্লেখ করে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার গ্রামীণ রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। পুলিশ অবাস্তব-আজগুবি এমন সব মামলা দিচ্ছে যা কখনো কোথাও ঘটেনি। এসব মামলা গণমাধ্যমে ‘গায়েবি মামলা’ বলে অভিহিত হচ্ছে।
যখনই কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা দলকে ঘায়েল করার প্রয়োজন অনুভূত হয়, তখন তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা দেয়া হয়, যাতে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি সারা বছর মামলা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তাকে হয়রানি এবং সামাজিকভাবে অপমান ও অপদস্থ করাই এসব মামলার লক্ষ্য। বিগত ১০ বছরে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি যেমন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা দেয়া হয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী ড. শহিদুল আলম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঈনুল ইসলাম ভিন্নমত পোষণের কারণে বর্তমানে কারাগারে। সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, দেশের দু’জন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একটি টেলিভিশন টকশোতে একজন মহিলার অপমানজনক ও উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ওই মহিলা সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন। পরে এ ব্যাপারে মইনুল ব্যক্তিগতভাবে ওই মহিলাকে ফোন করে এবং গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন। বিষয়টি এভাবেই মীমাংসিত হওয়ার কথা; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার পর তার বিরুদ্ধে মামলার হিড়িক পড়ে যায়।
এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১। রাতে কোর্ট বসিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই আইনজীবীকে ডিভিশন না দিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা হয়েছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, মইনুল হোসেন নব গঠিত জাতীয় যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৩ সালের সংসদে তিনি এমপি ছিলেন। তিনি সেই দু’জন বিরল ব্যক্তিত্বের একজন যারা একদলীয় বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছিলেন। আরেকজন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক (অব:) জেনারেল এম এ জি ওসমানী। এবার মইনুল হোসেনের মামলাটি ছিল জামিনযোগ্য। উচ্চ আদালত থেকে তিনি ছয় মাসের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্প্রতি একটি টকশোতে সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে কিছু অভিযোগ ব্যক্ত করেন। সেনাসদরের প্রতিবাদের পর জনাব চৌধুরী তার বক্তব্যটি ভুল বলে স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে তিনি তার ভুল বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এতদসত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হলো। তার বিরুদ্ধে একপর্যায়ে ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়। দায়েরকৃত সর্বশেষ মামলায় তার বিরুদ্ধে মাছ ও ফল চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ রকম বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় ভিলেজ পলিটিকস স্টাইলে তার প্রতিষ্ঠানের অনেক লোককে আসামি করা হয়।
এরপর একদল সন্ত্রাসী সাভারে গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের পিএইচএ ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর, লুট, মারধর করে। এমনকি, এরা নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করেছে। বহিরাগত এসব সন্ত্রাসী পিএইচএ ভবনে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড নামের ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। এখানে আরেকটি পীড়াদায়ক ঘটনা ঘটেছে। গণবিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী লিমন দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা আহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, এই শিক্ষার্থী ২০১১ সালে র্যাবের হাতে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই গণবিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। সন্ত্রাসীরা বেধড়ক পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙে ফেলেছে।
আমরা যেসব ঘটনা বিবৃত করলাম, তা ভিলেজ পলিটিকসের ফসল নয়। জাতীয় রাজনীতির এসব ঘটনা দেখলে মনে হয় যেন ভিলেজ পলিটিকস আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলেছে। ভিলেজ পলিটিকস টাইপের ঘটনাবলি ঘটেছে যা জাতীয় পরিচয়ের সাথে বেমানান, বৈসদৃশ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী। তাহলে স্পষ্ট হচ্ছে যে, জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি গ্রামীণ সমাজকে আলোকিত ও প্রভাবিত করতে পারেনি। বরং ভিলেজ পলিটিকসের নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় রাজনীতিকে আক্রান্ত করেছে। খুব সঙ্গতভাবেই জাতীয় নেতৃত্বকে এর জন্য দায়ী করা যায়। নাগরিক সাধারণ আশা করে, আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ অতিক্রম করে সুশাসন নিশ্চিত করবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com